হাওজা নিউজ বাংলা রিপোর্ট অনুযায়ী, স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের । স্বাধীনতার সূর্যোদয়ের এই ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে জানাই সবাইকে আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা ।
১৭৫৭ সালের ২৩ শে জুন পলাশীর আম্রকাননে বেনিয়া ইংরেজদের ষড়যন্ত্রে এবং মীর জাফর , ইয়ার লতীফ , জগৎ শেঠ , রায়দুর্লভের মতো কতিপয় ক্ষমতা লিপ্সু উচ্চাভিলাসী আমীর আমাত্য , কর্মকর্তা , অসাধু ব্যবসায়ী ও ধনকুবেরের সহযোগিতায় এক পাতানো প্রহসনমূলক যুদ্ধে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজুদ্দৌলার পরাজয় ও নির্মম ভাবে শাহাদাত বরণের মধ্য দিয়ে বাংলার স্বাধীনতা লুপ্ত হলে দীর্ঘ ২১৪ বছর পরে মুঘোল সুবে বাংলার বৃহত্তর অংশ ( তদানীন্তন পূর্ব বাংলা বা পূর্ব পাকিস্তান ) ১৯৭১ সালে পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে ।
ইংরেজ ঔপনিবেশিক শাসন কবলিত হওয়ার পর থেকে পূর্ব বাংলা কখনোই ব্রিটিশ শাসন মেনে নেয় নি এবং এর কাছে বশ্যতা ও নতি স্বীকারও করে নি । তাই এ অঞ্চলে সবসময় স্বাধীনতা অর্জনের প্রয়াস লক্ষ্য করা গেছে । যদিও ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিপ্লব সফল হয় নি তথাপি এ অঞ্চলের অধিবাসীরা যারা সবসময় ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক কুশাসনের চরম , অবহেলা, অন্যায় , বৈষম্য ও ধ্বংসযজ্ঞের শিকার হয়েছিলেন এবং ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক পলিসির কারণে এক সময়ের বিশ্বের এক অন্যতম সমৃদ্ধ নগরী ঢাকাও বীরান ধ্বংসস্তুপ ও জংগলকীর্ণ অঞ্চলে পরিণত হয়েছিল , তাঁরা নিশ্চুপ বসে থাকে নি এবং বিভিন্ন সময়ে স্বাধীনতা ও আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারের জন্য সংগ্রাম ও আন্দোলন অব্যাহত রাখেন যার ধারাবাহিকতায় পূর্ব বাংলা অঞ্চল ১৯৪৭ সালে ভারত বর্ষ বিভাগের মধ্য দিয়ে নব্য প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্র পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হয় । বলা যায় যে , ১৮৫৭ সালের মুক্তি ও স্বাধীনতা সংগ্রামের পর বাংলার স্বাধীনতার দ্বিতীয় পর্যায় ছিল ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের সাথে এই অঞ্চলের অন্তর্ভুক্তি। যে পাকিস্তান গঠিত হয়েছিল ব্রিটিশ শাসনের পরে অবহেলিত অঞ্চলসমূহের যথোপযুক্ত সার্বিক উন্নয়ন , আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার ও ন্যায়ের শাসন প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে সেই পাকিস্তানের শাসন ক্ষমতা গ্রহণকারী শাসকবৃন্দ পূর্ব পাকিস্তানের অধিবাসীরা যারা ছিলেন পাকিস্তানের জনসংখ্যার সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ তাদের ন্যায্য অধিকার হরণ করে তাদের ওপর ঔপনিবেশিক শাসন কর্তৃত্ব চাপিয়ে দেয় এবং দীর্ঘ ২৫ বছর যাবৎ অন্যায় অবিচার ও নিপীড়ন চালাতে থাকে পূর্ব পাকিস্তান অর্থাৎ পূর্ব বাংলার জনগনের উপর যার ফলশ্রুতিতে বিশেষ করে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালো রাতে পূর্ব বাংলার অধিবাসীদের ন্যায্য স্বাধিকার ও মুক্তি আন্দোলন দমন করার জন্য পাকিস্তানী সামরিক জান্তা ও শাসকগোষ্ঠী অপারেশন সার্চলাইট নামের জঘন্য কলঙ্কিত কুখ্যাত জাতি নিধনকারী অসম যুদ্ধ বাংলার নিরীহ জনগণের ওপর চাপিয়ে দিলে বাঙালি জাতি সশস্ত্র মুক্তি যুদ্ধ ও স্বাধীনতা সংগ্রামের পথ বেছে নিতে বাধ্য হয় এবং দীর্ঘ নয় মাস ত্যাগ-তিতিক্ষা ও কোরবানি করে তারা দখলদার পাকহানাদার বাহিনীর কাছ থেকে স্বাধীনতার রক্তিম সূর্য ছিনিয়ে আনে। মিলিয়ন মিলিয়ন শহীদের তাজা রক্ত ও লক্ষ লক্ষ মা-বোনের ইজ্জত আব্রুর বিনিময়ে অর্জিত হয় এই মুক্তি ও স্বাধীনতা । তাই এই শুভ মোবারক মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে সবাইকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন । আর সেই সাথে এই কষ্টার্জিত স্বাধীনতা রক্ষার ব্যাপারে আমাদের সবাইকে অবশ্যই যত্নশীল হতে হবে । আমরা যেন ভুলে না যাই যে আমরা এককালে পরাধীন ছিলাম তাই বিশ্বের নিপীড়িত নির্যাতিত জাতি সমূহের প্রতিও আমাদের নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য আছে । ফিলিস্তিনী জাতি ও মিয়ানমারের আরাকানের রোহিঙ্গা সহ বিশ্বের সকল নির্যাতিত অত্যাচারিত ন্যায্য অধিকার হত জাতিসমূহের মুক্তির লক্ষ্যে স্বাধীন-সার্বভৌম জাতি হিসেবে আমাদের কাজ করতে হবে যাতে এসব জাতি তাদের ন্যায্য অধিকার ফিরে পায় এবং সকল অত্যাচারীদের অত্যাচারেরও অবসান হয় । আর তা হলে পৃথিবী ও এই বসুন্ধরা আবারও শান্তিধামের পরিণত হবে । বিশেষ করে রোহিঙ্গা সমস্যার সাথে বাংলাদেশ জড়িয়ে গেছে । স্বৈরাচারী জাতি নিধনকারী মিয়ানমার সরকার ও সামরিক জান্তা লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বলপূর্বক ঠেলে পাঠিয়ে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের ওপর নগ্ন হামলা চালিয়েছে যা কখনো বরদাস্ত করা ও মেনে নেয়া যায় না। তাই রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যার সুষ্ঠু ও ন্যায্য সমাধান এবং তাদের সসম্মানে মিয়ানমারে প্রত্যাবর্তন ও পুনর্বাসন অত্র অঞ্চলে শান্তি ও নিরাপত্তা বিধান করতে পারে । আর সেই সাথে বাংলাদেশকেও সবদিক থেকে যথেষ্ট শক্তিশালী হতে হবে যাতে করে ভবিষ্যতে যেন রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যার মতো নতুন কোনো সমস্যার সৃষ্টি করার সুযোগ কেউ না পায় এবং আমাদের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করে লক্ষ লক্ষ ভিনদেশীকে বাংলাদেশী বলে বাংলাদেশের ভিতরে বলপূর্বক ঠেলে দেওয়ার দুরভিসন্ধি করতে না পারে ।
এই অল্প কিছু দিন আগে এই বিজয়ের মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বিশিষ্ট কিছু ব্যক্তির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যা আসলেই একটা স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের লংঘন স্বরূপ এবং কোনো ভাবেই এ অন্যায় মেনে নেয়া যায় না । কারণ , মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পুলিশ ও এফবিআই - এর হাতে প্রতি বছরে এক বিশাল সংখ্যক সন্দেহ ভাজন ব্যক্তি নিহত হয় বিনা বিচারে যার প্রমাণ গত বছর ২০২০ সালে পুলিশের হাতে কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়ডের নিহত হওয়া। তাছাড়া সিআইএ পরিচালিত দেশে দেশে সামরিক অভ্যুত্থান ও কুদেতায় এবং গণ্ডগোল পাকিয়ে বহু অগণিত নিরীহ মানুষের রক্ত ঝড়িয়েছ ও ঝড়াচ্ছে এই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র । আফগানিস্তান , ইরাক ও সিরিয়া হচ্ছে যার জ্বাজ্জল্য প্রমাণ । তাই বাংলাদেশের ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এহেন ন্যাক্কারজনক পদক্ষেপ আমরা স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র ও দেশ হিসেবে বরদাশত করতে পারি না ।
আবারও বাংলাদেশের সার্বিক সমৃদ্ধি ও প্রগতির জন্য মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি ।
মুহাম্মদ মুনীর হুসাইন খান
১৬ -১২ - ২০২১